Skip to main content

বিসিএসের ক্যাডার চয়েসঃ সঠিক ক্যাডার পছন্দক্রম কিভাবে নির্ধারণ করবেন - Shamim Anwar

নিজের উপযোগী সঠিক ক্যাডার চয়েস নির্ধারণ বিসিএস পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভাল পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও চয়েস দেওয়ার ভুলে প্রত্যাশিত ক্যাডার যেমন হাতের মুঠো থেকে ফসকে যেতে পারে, তেমনি ভাইভা বোর্ডের সামনেও তৈরি হতে পারে বিব্রতকর পরিস্থিতি । সুতরাং আবেদন করার পূর্বেই এ সংক্রান্ত সুচিন্তিত - সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রত্যেক বিসিএস পরীক্ষার্থীর অবশ্য কর্তব্য। অনেকেরই জিজ্ঞাসা, কোন কোন ক্যাডার চয়েস দিব এবং সেগুলোর মধ্যে কোনটি ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড চয়েসে রাখব?
প্রথমেই বলে রাখি, চাকুরীরত না থাকলে যে যে ক্যাডার চয়েস দেওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে, তার সবগুলোই চয়েস লিস্টে রাখুন। আর আপনি যদি কোন সরকারি /বেসরকারি জবে থাকেন তাহলে শুধু সেই ক্যাডারগুলোই চয়েস দিন যেগুলোতে সুপারিশকৃত হলে আপনি যোগদান করবেন।
পছন্দক্রম নির্ধারণঃ
--------------------------
সঠিক ক্যাডার চয়েস ক্রম ঠিক করার জন্য 
বিসিএসের ক্যাডারসমূহকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়--
ক. আইন প্রয়োগ ও প্রশাসন সংক্রান্তঃ
১. পুলিশ
২.প্রশাসন
৩.আনসার
খ. অর্থ, বাণিজ্য রাজস্ব, আর্থিক প্রক্রিয়া সংক্রান্তঃ
১. কাস্টমস
২.ট্যাক্সেশন
৩.অডিট এন্ড একাউন্টস
৪. ইকনোমিক
৫. বাণিজ্য
গ. পেশাগত 
১. স্বাস্থ্য 
২.শিক্ষা
৩. কৃষি
৪. বন
৫. প্রকৌশল
ঘ. অন্যান্য
১. পররাষ্ট্র
২. খাদ্য
৩. রেলওয়ে ইত্যাদি
এখন যদি আপনি 
-------------------------
ক.চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনার কর্মজীবনে দায়িত্ব পালন করতে চান।
খ. আইন প্রয়োগ বিচার ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে চান
গ. অন্যায় প্রতিরোধ ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান
ঘ. ছুটি শব্দটি ভুলে যেতে হতে পারে -- এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আছে।
ঙ. জনগনকে সরাসরি সেবা দেওয়ার ইচ্ছা
চ. সমাজে, কর্মস্থলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ দেখার খুব ইচ্ছা।
তাহলে নিশ্চিন্তে আপনার ক্যাডার ক্রম হতে পারে
---------------
ক>খ>গ>ঘ
----------------
অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনার প্রথম তিনটি ক্যাডার চয়েস হবে পুলিশ, এডমিন, আনসার। এ তিনটি ক্যাডারের মধ্যে আপনার পছন্দ ও বাস্তবতা বিবেচনায় ১,২,৩ ক্রম নির্ধারণ করুন। এর পর ৪,৫,৬....... নম্বরে খ,গ, ঘ এর ক্যাডার সমূহ চয়েস দিন। ( পররাষ্ট্র ছাড়া, কারন প্রথম তিনটি ক্যাডার চয়েস যেহেতু পুলিশ, এডমিন, আনসার, তাই পররাষ্ট্র চয়েস দেওয়া এখানে অর্থহীন)
আবার যদি আপনিঃ
---------------------------
১. ঝামেলামুক্ত জীবন যাপন করতে চান
২. নয়টা -পাঁচটা অফিস করার ইচ্ছা
৩.এসি রুম ছাড়া আপনার চলে না
৪.বেতনের বাইরেও প্রচুর বৈধ আর্থিক প্রণোদনা পেতে চান
৫.বিদেশ ভ্রমন ট্রেনিং ইত্যাদির দিকে ঝোক।
তাহলে নিশ্চিন্তে আপনার ক্যাডার ক্রম হতে পারে
----------------
খ>ক>গ>ঘ
----------------
যদি আপনি
-----------------
১. আপনার একাডেমিক অর্জিত জ্ঞানকে সরাসরি পেশাগত কাজে লাগাতে চান
২অর্থবিত্তের ( আমি বৈধ অর্থের কথা বলছি) বদলে সততাকে, ক্ষমতার বদলে সদারচারকে, কৃত্রিম অভিজাততন্ত্রের বদলে মানুষের শ্রদ্ধা ভালবাসা লাভকে জীবনের চরম মোক্ষ জ্ঞান করে থাকেন,
তাহলে আপনার ক্যাডার ক্রম হওয়া উচিত
-----------------
গ>ক>খ> ঘ
-----------------
এছাড়াও
আপনি যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান বা কূটনৈতিক উচ্চ মর্যাদা ভোগ করতে চান, তাহলে পররাষ্ট্র ফার্স্ট চয়েস হিসেবে রাখতে পারেন। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, পররাষ্ট্র ক্যাডার সাধারণত অন্য সব ক্যাডারের আগেই পূরণ হয়ে যায়, তাই চয়েস দিতে চাইলে পররাষ্ট্র ক্যাডার এক নম্বরেই দেওয়া উচিত। অন্য ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিয়ে পরের দিকে পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েস দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোন বিধিনিষেধ না থাকলেও এটা ভাইভাবোর্ড সদস্যগনের নিকট আপনার চিন্তার অপরিপক্বতা ও ক্যাডার চয়েস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতাকেই প্রকাশ করবে।
(যেহেতু আমি পুলিশ ক্যাডারে কর্মরত আছি, পরামর্শ রইল, চয়েস দেওয়ার আগে পুলিশ ক্যাডারের ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যত সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিন। আমার ধারনা, তখন পুলিশ ক্যাডার ছাড়া অন্য কোন ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দেওয়ার চিন্তাও আপনার মাথায় আসবে না।)
জেনে রাখুনঃ
------------------
১. জাতীয় পরিচয় পত্রে যে স্বাক্ষর ব্যবহার করছেন ( এমনকি যদি বাংলা বা ইংরেজিতে নামও লিখে থাকেন) বিসিএসের আবেদন করার সময় সেই একই স্বাক্ষর ব্যবহার করুন, অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা থেকে রেহাই পাবেন। 
২. আবেদন করার সময় সাম্প্রতিক ছবি ব্যবহার করুন। ছবিটি যেন এমনভাবে এডিট করা না হয়, যাতে আপনার বয়স, গায়ের রঙ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
৩. বর্তমান ঠিকানায় আপনি যদি যদি দীর্ঘদিন অবস্থান না করেন, বা ওই এলাকায় আপনার তেমন চেনাজানা না থাকে, ভবিষ্যত ঝামেলা এড়ানোর জন্য আপনার স্থায়ী ঠিকানাকেই বর্তমান ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন। অর্থাৎ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই দিতে পারেন।
৪.পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েস দিতে চাইলে ফার্স্ট চয়েস হিসেবেই দেওয়া উচিত। ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে এই ক্যাডার চয়েস দেওয়ার চিন্তা বিসর্জন দিন।
৫.আপনি যে ক্যাডারেই চাকুরী করুন, সেখান থেকেও আপনি উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব হতে পারবেন। উপসচিব পদের ৭০% পূরণ করা হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে অবশিষ্ট ৩০% পূরণ হয় অন্যান্য ক্যাডার থেকে।
৬.অনেকেই আমার নিজের পছন্দক্রম জানতে চেয়েছেন।আমার নিজের পছন্দক্রম ছিল নিম্নরূপ--
১.পুলিশ 
২. প্রশাসন
৩. আনসার
৭. পুলিশ ও আনসার ক্যাডারে আবেদন করতে হলে ন্যুনতম উচ্চতা ছেলেদের ক্ষেত্রে ৫'৪" আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫'০" চাওয়া হয়েছে। এই উচ্চতার শর্ত যাদের পূরণ হয় না, তারা কোনভাবেই এই দুটি ক্যাডার পছন্দ তালিকায় রাখবেন না। এছাড়াও যাদের মেজর শারীরিক সমস্যা আছে, তারাও এ দুটি ক্যাডার চয়েস দেওয়া হতে বিরত থাকতে পারেন।
৮. পুলিশ ও আনসার ব্যতীত অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ন্যূনতম উচ্চতা পুরুষ প্রার্থীদের ৫.০", নারী প্রার্থীদের ৪'১০" প্রয়োজন হবে।
সবশেষে একটা বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি যে ক্যাডারেই চাকুরী লাভ করেন না কেন আক্ষরিক অর্থে আপনি জনগণের চাকরই হতে যাচ্ছেন। আপনি যদি মনে করে থাকেন নির্দিষ্ট কোন ক্যাডার ফকির থেকে আপনাকে আমির বানিয়ে দিবে, সমাজের কেউকেটা হিসেবে আপনার উত্তরণ ঘটাবে, ক্ষমতার প্রবল দাপটে চাকরের পদে থেকেও মালিকায় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন, আইন প্রয়োগের অধিকার, বৈধ-অবৈধ অর্থবিত্তের জোরে যা খুশি তা করার লাইসেন্স পেয়ে যাবেন , তাহলে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে মিনতি রাখব, আমার এ পরামর্শ আপনার জন্য নয়। এ গরীব দেশের সিভিল সার্ভিসকে কলুষিত না করে আপনি বরং অন্য পেশায় ট্রাই করুন। হয়ত আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। আর একজন শিক্ষিত, সচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জনগনের প্রকৃত চাকরের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ার জন্য আপনারা যারা দিনরাত নির্ঘুম একাগ্র অধ্যবসায় করে চলেছেন, ভবিষ্যতের একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জনবান্ধব- দুর্নীতিমুক্ত- নাগরিক সেবা মুখী সিভিল সার্ভিসে আপনাকে স্বাগতম।


..............................................................
Shamim Anwar
এএসপি, ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার
এক্স একাউন্টিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
.........................................................….

Comments

Popular posts from this blog

বিমসটেক (BIMSTEC) সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন:

১. বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম কি ছিল? উত্তর: BIST-EC (Bangladesh, India, Sri Lanka, and Thailand Economic Cooperation)। পরবর্তীতে, ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ মায়ানমার সদস্য হিসেবে যোগদানের পর সংগঠনের নামটি কিছুটা পরিবর্তন করে BIMST-EC করা হয়। ২. বিমসটেক (BIMSTEC) এর বর্তমান নামকরণ করা হয় কখন? উত্তর: ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই ব‍্যাংককে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় BIMSTEC বা Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical & Economic Cooperation. ৩. এটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? উত্তর: ১৯৯৭ সালের ৬ জুন; ব‍্যাংকক ঘোষণার (Bangkok Declaration) মাধ্যমে। ৪. বিমসটেকের বর্তমান সদস্য কয়টি? উত্তর: ৭টি। দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি - বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২টি - মায়ানমার ও থাইল্যান্ড। নেপাল ও ভুটান ২০০৪ সালে সর্বশেষ পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ৫. বর্তমানে বিমসটেকের সভাপতিত্ব করছে কোন দেশ? উত্তর: নেপাল। প্রথম সভাপতিত্ব করে বাংলাদেশ। ৬. বিমসটেকের সহযোগিতার ক্ষেত্র কয়টি? উত্তর: ১৪ টি। ৭. বিমসটেকের স্থায়ী সদরদপ্তর (Perm...

বিশ্বের বিভিন্ন প্রনালিঃ

১) বেরিং প্রনালি সংযুক্ত করে ---বেরিং সাগর - উত্তর সাগর।   ২) বেরিং সাগর পৃথক করে --- এশিয়া ও উ.আমেরিকা মহাদেশকে।   ৩)ফ্লোরিডা প্রনালি সংযুক্ত করে --- মেক্সিকো উপসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরকে। ৪) ফ্লোরিডা প্রনালি পৃথক করে --- ফ্লোরিডা ও কিউবাকে।   ৫) ডেভিস প্রনালি সংযুক্ত করে--- বেফিন সাগর ও লুব্রাডার সাগর।   ৬) ডেভিস প্রনালি পৃথক করে --- গ্রীনল্যান্ড ও কানাডা। ৭) জিব্রাল্টার প্রনালি সংযুক্ত করে -- উ. আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগরকে। ৮) জিব্রাল্টার প্রনালি পৃথক করে --- আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশকে।   ৯) হরমুজ প্রনালি সংযুক্ত করে -- পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরকে। ১০) হরমুজ প্রনালি পৃথক করে --- আরব ও ইরানকে।   ১১) পক প্রনালি সংযুক্ত করে --- আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরকে।   ১২) পক প্রনালি পৃথক করে --- ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে। ১৩) মালাক্কা প্রনালি সংযুক্ত করে -- বঙ্গোপসাগর ও জাভা সাগরকে৷   ১৪) মালাক্কা প্রনালি পৃথক করে--- সুমাএা ও মালেশিয়া। ১৫) সুন্দা প্রনালি সংযুক্ত করে--- জাভা সাগর ও উ. ভারত মহাসাগরকে।   ১৬) সুন্দা প্রনালি পৃথক করে --- সুমাএা ও জাকার্তাকে। ১৭) মা...